চিকিৎসার জন্য সারাবছর ভেলোরে পাড়ি জমান বহুসংখ্যক বাঙালি। উন্নত এবং ভালো মানের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য আজও অনেকের কাছেই ভেলোরের বিকল্প নেই; হসপিটাল গুলিতে বাঙালিদের ভিড় তা বারেবারে প্রমাণ করে। শুধুই কি পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়মিত আসেন তামিলনাড়ুতে অবস্থিত এই শহরে। শুধুমাত্র চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই শহরের প্রাণকেন্দ্র সর্বজনবিদিত সি.এম.সি হসপিটাল। এছাড়াও এখানে রয়েছে উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পন্ন অন্যান্য হসপিটাল। ভ্রমণপ্রেমী বাঙালির জন্য ভেলোরের কিছু দ্রষ্টব্য স্থানের হদিস সহ রইলো এসবেরই সুলুকসন্ধান।
চিকিৎসায় ভেলোর
প্রথমেই আসি সি.এম.সি-র কথায়। ভেলোরে যারা চিকিৎসার জন্য আসেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের গন্তব্য থাকে সি.এম.সি বা ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ। ১৯০০ সালে ক্রিশ্চিয়ান মিশনারিজ কন্যা ইডা সোফিয়া স্কাডার,সেই সময়ে নারীদের প্রসবকালীন যন্ত্রণার কথা ভেবেই স্থাপন করে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ। ৯০ একর জমিতে অবস্থিত এই হসপিটালটি ভারতের অন্যতম সেরা চিকিৎসার ঠিকানা। এখানে প্রধানত দুইভাবে চিকিৎসা করা হয়৷ এক জেনারেল বা সাধারণ দ্বিতীয় টি হলো প্রাইভেট। উভয়ের ক্ষেত্রেই সিএমসির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অগ্রিম করে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। জেনারেলের ক্ষেত্রে অতি সুলভ মূল্যে চিকিৎসা করা হয় এবং সেক্ষেত্রে অ্যাপয়েনমেন্ট পেতে অনেকটা সময় লাগে, অন্যদিকে প্রাইভেটে খরচ তুলনামূলক বেশ কিছুটা বেশি এবং জেনারেলের তুলনায় কিছুটা আগেই অ্যাপয়েনমেন্ট পাওয়া যায়।
সিএমসি ছাড়াও এখানে আছে নারায়ণা হসপিটাল এবং শ্রী নারায়ণী হসপিটাল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রী নারায়ণী হসপিটাল৷ সিএমসি থেকে আনুমানিক বারো কিলোমিটার দূরত্বে শ্রীপূরম নামক স্থানে অবস্থিত হসপিটালটির অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং নিয়মানুবর্তিতা মুগ্ধ করে। সিএমসির তুলনায় অনেক কম সময়ে চিকিৎসা করা সম্ভব এখানে। নিঃসন্দেহে এখানে চিকিৎসার খরচ মধ্যবিত্তের আয়ত্তের মধ্যে।
ভ্রমণে ভেলোর
দক্ষিণ ভারত জুড়ে আধিক্য চোখে পড়ে নানারকম মন্দিরের। মূল আর্কিটেকচার এক ধরণের হলেও প্রতিটি মন্দিরের স্থাপত্য নিঃসন্দেহে দৃষ্টিনন্দন। অবসরের বিকেলে দেখে নিতেই পারেন তেমন কিছু দ্রষ্টব্য স্থান।
★ শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণী গোল্ডেন টেম্পল – শ্রী নারায়ণী হসপিটাল থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত এই মন্দির টি দেখলে অবচেতনে বলে উঠতেই পারেন, “আহা! কি দেখিলাম!”
★ ভেলোর ফোর্ট – সিএমসি থেকে পড়ন্ত বিকেলে পায়ে হেঁটেই দেখে আসতে পারেন ভেলোর ফোর্ট। সামনের সবুজ ঘাসে দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারেন একটি বিকেল।
★ জলকান্ডেশ্বরী মন্দির – ১৫৬৬ খ্রীষ্টাব্দে তৈরী এই মন্দিরের কারুকাজ মুগ্ধ করে পর্যটকদের। এটি মূলত শিব মন্দির।
★ রত্নগিরি মুরুগান মন্দির – চতুর্দশ শতাব্দী তে স্থাপিত এই মন্দির টি পরবর্তী সময়ে রেনোভেশন করা হয়। সিএমসি থেকে তেরো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দির টি রত্নগিরি পাহাড়ের উপর অবস্থিত।
কীভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে প্রতিদিন রাত ৮:৩৫ এ ছাড়ে যশবন্তপুর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস। নামতে হবে কাটপাডি এবং সেখানে এই ট্রেনটি পৌঁছায় রাত ১:৫০ এ। স্টেশনে প্রচুর অটো এবং ট্যাক্সি পাওয়া যায় হোটেলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এছাড়াও বিমানে আসতে হলে নামতে হবে চেন্নাই বিমানবন্দরে। সেখান থেকে ভেলোর ঘন্টা তিনেকের পথ।
কোথায় থাকবেন
ভেলোরে যারা আসেন মুলত চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই। তাই তাদের কথা মাথায় রেখে কিছু ইকোনমিক হোটেলের খোঁজ দেওয়া হলো।
★ সাফা গেস্ট হাউজ – 073053 25407
★ জয়কৃষ্ণ লজ – 0416 222 2703
★ প্রিয়া গেস্ট হাউজ – 0416 420 3356
★ অ্যানেক্স লজ – 0416 420 1570
তাহলে আর কি, এবার শুধু বেরিয়ে পরার অপেক্ষা। ভেলোর তো এবার হাতের মুঠোয়।
[…] […]